সোমবার, ৯ এপ্রিল, ২০১৮

কুকুরের মত ঘেও ঘেও করে এক আশ্চর্য মাছ।

কুকুরের মত ঘেও ঘেও করে এক আশ্চর্য মাছ:

এই মাছের নাম হলো পিরানহা বা রাক্ষুসে মাছ। আসুন আমরা এই মাছ সম্পর্কে বিস্তারিত জানি। 

এদের আদি নিবাস দক্ষিণ আমেরিকা। ভেনিজুয়েলাতে এদেরকে বলা হয় কারিবেস । তীক্ষ্ণ দাঁত যুক্ত রাক্ষুসে মাছ হিসাবে এদের কুখ্যাতি আছে।সাধারণত পিরানহা পাওয়া যায় দক্ষিণ আমেরিকার ওরিনকো, আমাজান সাও ফ্রান্সিসকো নদীর অববাহিকায় এদের সবচেয়ে বেশি পাওয়া যায়। যদিও শীতল পানিতে এরা বাঁচে না, তারপরেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উইনেবাগো এবং উইসকোনসিন হ্রদেও এই মাছ দেখা পাওয়া যায়। এদের কিছু প্রজাতি এ্যাকুইরিয়ামে পালা হয়। বিভিন্ন সৌখিন মৎস্য প্রেমিকের দ্বারা এই মাছ পৃথিবীর অন্যান্য অঞ্চলেও ছড়িয়ে পড়েছে। যেমন বাংলাদেশের কাপ্তাই হ্রদ এবং অন্যান্য জলাশয়ে এই মাছ কিছু কিছু ধরা পড়ছে। সম্প্রতি চীনের লিজিয়াং নদীতে এই মাছ পাওয়া গেছে। বাংলাদেশে অসৎ মৎস্য ব্যবসায়ী থাই রূপচাঁদা নামে এই মাছ বাজারে বিক্রয় করে থাকে। বাংলাদেশে এই মাছের চাষ বা বিক্রয় নিষিদ্ধ।বাংলাদেশে এই মাছ কীভাবে এলো সেটা জানা না গেলেও ধারণা করা হয় থাইল্যান্ড থেকে প্রথম এই মাছ বাংলাদেশে আনা হয়।

কুকুরের মত ঘেও ঘেও করে এক আশ্চর্য মাছ।
piranha fish-http://www.topbanglapages.com/

এ্যাকুয়ারিয়ামের বাহারি মাছ হিসেবে বাংলাদেশে এর আগমন হলেও প্রথমে উৎসাহী হ্যাচারি টেকনিশিয়ানের হাতে সফল প্রজননের পর এ্যাকুয়ারিয়ামের গণ্ডি ছাড়িয়ে চলে যায় চাষের পুকুরে। বর্তমানে বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় এই মাছ চাষ ও বিক্রি হচ্ছে। রাক্ষুসে প্রজাতির এই মাছে রয়েছে শক্ত ও তীক্ষ্ণ দাঁত এবং শক্তিশালী চোয়াল। এ জন্য এরা খুব সহজেই শিকারি প্রাণীর দেহ ফুটো বা মাংস ছিঁড়ে নিতে পারে। সাধারণত এরা মাংসাশী স্বভাবের মাছ।বর্তমানে যে সকল প্রজাতির পিরানহা দেখা যায়, সেগুলোর প্রকৃত সংখ্যা যথার্থরূপে উপস্থাপন করাটা মুশকিল। কারণ এর নতুন নতুন প্রজাতি এখনো আবিস্কৃত হচ্ছে। এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ৩০ প্রকার পিরানহা শনাক্ত করা হয়েছ। ধারণা করা হচ্ছে শেষ পর্যন্ত এর প্রজাতির সংখ্যা ৬০ এর বেশিও হতে পারে।

শারীরিক গঠনঃ

প্রায় সব ধরনের পিরানহা মাছেই আছে রেজরের মত ধারালো দাঁত ও অত্যন্ত শক্ত নিম্ন চোয়াল। আর এজন্যই ওরা খুব দ্রুত কামড়িয়ে খেতে পারে। এতে শক্তিশালী নিম্ন চোয়াল ছাড়াও আছে উন্নত ও পুরু মাংসপেশি ও পার্শ্বীয়ভাবে চাপা দেহ। লক্ষণীয় যে, পিরানহার নৌকার পাটাতনের (keel ) ন্যায় শারীরিক গঠন (মাথা হতে লেজ পর্যন্ত), বড় ও শক্তিশালী লেজ, ছোট ছোট আঁইশ দিয়ে ঢাকা শরীর দেখতে পাওয়া যায়; যা দ্রুত সাঁতরানোর জন্য সহায়ক। পিরানহার চোখ দুটি বেশ বড় এবং দ্রুত শিকার ধরে সহায়ক। আবার এর নাকটিও বেশ বড় যাতে আছে অধিক দ্রুত পানি প্রবাহ নির্গমনের উপযোগী বড় বড় নাসারন্ধ্র এবং এটি শিকারের গন্ধ অনুসরণের জন্য উপযোগী। এই ধরনের শারীরিক গঠনের জন্যই এটি যেমন ক্ষিপ্র গতি সম্পন্ন তেমনি শক্তিশালী আক্রমণকারী। এসব বৈশিষ্ট্যই পিরানহাকে ভয়ঙ্কর এক রাক্ষুসে মাছের পরিচিতি প্রদান করেছে।

কুকুরের মত ঘেও ঘেও করে এক আশ্চর্য মাছ
পিরানহা মাছ-http://www.topbanglapages.com/

পিরানহা বসবাসের স্থানঃ

খুবই আক্রমণাত্মক পিরানহা মাছের অনেক প্রজাতি স্বাদু পানিতে  এবং কিছু প্রজাতি লোনা পানিতে বসবাস করে। দক্ষিণ আমেরিকা, উত্তর আমেরিকা এমনকি আফ্রিকাতেও এদের নানা প্রজাতির বিচরণ দেখতে পাওয়া যায়। এসব এলাকার প্রচুর সংখ্যক নদী, খাল ও হ্রদে এরা বসবাস করে। বড় ও অগভীর জলাশয়ে বেশি দেখা গেলেও এ্যাকুয়ারিয়ামের ছোট্ট পরিবেশও এরা স্বচ্ছন্দে মানিয়ে নিতে পারে।

পিরানহার আচার আচরণ কেমনঃ

পিরানহা সাধারণত দলবদ্ধভাবে শিকার অনুসরণ ও আক্রমণ করে । দলবদ্ধভাবে অবস্থানকারী পিরানহা মাছকে আপাতদৃষ্টিতে শান্ত-ভদ্র মনে হলেও তাদের মধ্যে সবসময় পারস্পারিক অবিশ্বাস ও ভয় কাজ করে। কারণ তাদের মধ্যে ক্ষুধার্ত অবস্থায় তথা খাদ্য স্বল্পতা অবস্থায় নিজের প্রজাতির সদস্যদের ভক্ষণের প্রবণতা দেখা যায়। এ স্বভাবের জন্য  তারা পরস্পরকে মারাত্মকভাবে আহত করতে বা পরস্পরকে হত্যা করতেও সক্ষম। আর বেঁচে থাকার তাগিদে তাদের সবসময় অন্যদের অবস্থান জানা এবং আক্রমণের জন্য বা আক্রমণ প্রতিহত করার জন্য প্রস্তুত থাকার প্রয়োজন হয়। তারা কুমিরের ন্যায় ধৈর্যের সাথে পাখির ছানাটি কখন ভুলক্রমে বাসা হতে পানিতে পড়বে এজন্যও অপেক্ষায় থাকে। এমনকি শক্ত খোসা বিশিষ্ট ফল, সাধারণ ফলফলারি,  বীজ বা পাতা খেয়েও ক্ষুধা নিবারণ করে। শুষ্ক মৌসুমে খাদ্যাভাব দেখা দিলে সবল পিরানহা নিজেদের দলের দুর্বল সদস্যকে আক্রমণ করে থাকে। খাদ্য স্বল্পতা বা ক্ষুধার্থ অবস্থার চেয়ে প্রজননকালে এরা আরও বেশি আগ্রাসী স্বভাব প্রদর্শন করে, এ সময় তারা হায়েনার মত পরস্পরের উপর বেশি আক্রমণাত্মক হয়। এ অবস্থায় একই জলাশয়ে স্বাভাবিকভাবেই তারা অন্য মাছের উপস্থিতিই সহ্য করে না, যদিও কখনো কখনো শান্ত আচরণও প্রকাশ করে থাকে। তাই বিজ্ঞানীরা মনে করেন যে এটি পরিবেশগত, খাদ্য ও বাসস্থানের অভাবের কারণেই হয়।

কুকুরের মত ঘেও ঘেও করে এক আশ্চর্য মাছ
piranha fish-http://www.topbanglapages.com/

পিরানহা খাদ্যভাসঃ 

পিরানহা সর্বভুক প্রকৃতির অর্থাৎ এরা উদ্ভিদ ও প্রাণী উভয় ধরণের খাবারই খেয়ে থাকে। তবে প্রাণীই এদের প্রথম পছন্দ। তবে মূল বিষয় হচ্ছে খাবার গ্রহণের সময় প্রকাশিত এদের আক্রমাত্মক চরিত্র যা বিশেষত খাদ্য স্বল্পতায় অধিক প্রদর্শিত হয়ে থাকে।

পিরানহার প্রধান প্রধান খাদ্যের তালিকাঃ
  1. জলজ উদ্ভদরাজির পাতা, ফল ও ফলের বীজ শামুক, ঝিনুক বা এদের ডিম
  2. জলজ মাছ ও পোকামাকড়ের ডিম, পোকামাকড়
  3. ছোট-বড় মাছ ,মৃত প্রাণী এবং যে কোন বয়সের ব্যাঙ ইত্যাদি
বিস্তারিত দেখতে ভিডিও টি দেখুনঃ

শেয়ার করুন

Author:

আমি একজন অতি সামান্য মানুষ। পেশায় একজন লেখক,ব্লগার এবং ইউটিউবার। লেখালেখি করতে খুব ভালো লাগে। আমার এই সামান্য প্রয়াসের মাধ্যমে মানুষের কিছু শেখাতে পারা ও বিনোদন দেওয়ার মাধ্যমে আনন্দ খুঁজে পায়।

0 coment rios: