বুধবার, ১২ মে, ২০২১

শরীরের অবস্থা দেখে বুঝে নিন আপনার ক্যানসার আছে কিনা।

শরীরের অবস্থা দেখে বুঝে নিন আপনার ক্যানসার আছে কিনা।

ক্যানসার শরীরের জন্য একটি মারাত্মক জটিল রোগ। ক্যানসার শরীরের যেকোনো অঙ্গে হতে পারে। এমনকি এটি টিউমার অথবা অদৃশ্য রক্তের শ্বেতকণিকায়ও হতে পারে। ক্যানসার এমন একটি রোগ যা একটিমাত্র কোষ থেকে সৃষ্টি হয়। আজকের আর্টিকেলটি পড়ার মাধ্যমে শরীরের অবস্থা দেখে বুঝে নিন আপনার ক্যানসার আছে কিনা।

মানুষের শরীর কোটি কোটি কোষ দিয়ে গঠিত। আর এই কোষের মূল উপাদান হচ্ছে ক্রমোসোম। এই ক্রমোসোমের মধ্যে অন্তর্নিহিত রয়েছে অসংখ্য জিন। প্রতিটি জিন একটি নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য রক্ষা করে বা কর্মসম্পাদনের জন্য দায়ী থাকে। এ ধরনের একটি জিন হচ্ছে প্রটো অনকোজিন, আরেকটি হচ্ছে ক্যানসার সাপ্রেসরজিন। নাম শুনেই হয়তো বুঝতে পারছেন, ক্যানসার সাপ্রেসরজিন শরীরে ক্যানসার না হওয়ার জন্য ভূমিকা পালন করে। অপরদিকে প্রটো অনকোজিন, অনকোজিন হওয়ার অপেক্ষায় থাকে। যদি কোনো কারণে ক্যানসার সাপ্রেসর জিন তার কার্যকারিতা হারিয়ে ফেলে বা প্রটো অনকোজিন অনকোজিনে রূপান্তরিত হয়ে যায়, অথবা উভয় প্রক্রিয়া একই সঙ্গে ঘটে থাকে, তাহলে অনকোজ বা টিউমার বা ক্যানসার শুরু হয়ে যায়।     

ধরা যাক, যেকোনোভাবে আপনার জিহ্বায় একটি ক্ষত সৃষ্টি হলো। দু-চার দিনের মধ্যে ক্ষতটি পূরণ হয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কোষ বৃদ্ধি বন্ধ হয়ে গেল। যদি কোষ বৃদ্ধি ব্ন্ধ না হয়ে চলতেই থাকত, তাহলে কী হতো? কোষ বাড়তে বাড়তে মুখের বাইরে চলে আসত। এই প্রক্রিয়া ওই দুটি জিনের সামঞ্জস্যপূর্ণ কাজের জন্য হয়ে থাকে। 

জন্মগতভাবে অনেকের জেনেটিক সমস্যা থাকে। এতে খুব অল্প বয়সে, এমনকি দুই বছরের কম বয়সে চোখের ক্যানসার, কিডনির ক্যানসার, মস্তিষ্কের ক্যানসার ইত্যাদি হয়। শরীরের এই জিন নষ্ট হয়ে যাওয়া বা কার্যকারিতা নষ্ট হয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়াকে বলা হয় সেলুলার মিউটেশন। এই সেলুলার মিউটেশন শরীরের বিভিন্ন কারণেও হয়ে থাকে। যেমন : রেডিয়েশন এক্স-রে, গামা-রে, সূর্যের অতি বেগুনি রশ্মি , তামাকের ধোঁয়া, অ্যাসবেসটর, আলকাতরা, আর্সেনিক, ডিটিটি পাউডার, কাপড়ের রং করার অ্যানিলিনডাই, হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস ইনফেকশন, হেপাটাইটিস-বি ভাইরাস ইত্যাদির মাধ্যমেও হতে পারে।    

অধিক চর্বিযুক্ত খাবার, ছত্রাকযুক্ত খাবার, অধিক মাংসভোগী এবং কম সবজি ও কাঁচা ফল গ্রহণকারীর ক্যানসার হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে। যে মা সন্তানকে বুকের দুধ পান করান না এবং যে নারী সন্তান গ্রহণ করেননি অথবা আদৌ বিয়ে করেননি, তাঁদের স্তন ক্যানসার হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে। এ ছাড়া যেসব লোক একাকী জীবনযাপন করেন এবং সদা বিমর্ষ থাকেন, তাঁদেরও ক্যানসার হওয়ার প্রবণতা সবচেয়ে বেশি থাকে।  

সিগারেটের ধোঁয়ার মধ্যে প্রচুর কারসিনোজেন থাকে। কারসিনোজেনই হচ্ছে সেই পদার্থ, যা শরীরে ক্যানসার সৃষ্টি করে বা করাতে চায় (সেলুলার মিউটেশনের মাধ্যমে)। তামাকের ধোঁয়ার মধ্যে কারসিনোজেন হচ্ছে কেমিক্যাল কারসিনোজেন যা শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। ধূমপানের কারণে ফুসফুসের ক্যানসার, স্বরনালির ক্যানসার, গলনালির ক্যানসারসহ প্রায় প্রতিটি অঙ্গের ক্যানসার হতে পারে। 
 

জেনে নিন শরীরের বিভিন্ন অঙ্গের ক্যান্সারের উপসর্গঃ 

ক্যানসারের উপসর্গ নির্ভর করে শরীরের কোন অঙ্গে ক্যানসার হয়েছে এবং কোন রোগ কোন পর্যায়ে অবস্থান করছে তার উপর।
 
মুখগহ্বরের ক্যানসারঃ মুখগহ্বরের ক্যানসার হলে দীর্ঘদিন ধরে স্থায়ী একটি ক্ষত থাকবে, ব্যথা থাকতে পারে।  খেয়াল রাখবেন ১-৩ সপ্তাহের মধ্যে এই ক্ষত সেরে না উঠলে অবশ্যই ডাক্তারের কাছে পরামর্শ নিতে হবে। 

খাদ্যনালিতে ক্যান্সারঃ খাদ্যনালিতে ক্যান্সার হলে শক্ত খাবার থেকে শুরু করে তরল খাবার  ক্রমান্বয়ে গিলতে অসুবিধা হয়। এবং খাদ্য গলার মধ্যে আটকে থেকে বমি হয়ে বেরিয়ে যায়। 

পাকস্থলীর ক্যানসারঃ পাকস্থলীর ক্যানসারের ক্ষেত্রে ক্ষুধামন্দা, বমি বমি ভাব এবং পেটব্যথা হওয়া,এছাড়াও কালো পায়খানা ইত্যাদি হয়।  
 
ফুসফুসের ক্যানসারঃ
ফুসফুসের ক্যানসার হলে ক্রমাগত কাশি, শ্বাসকষ্ট, বুকে ব্যথা, গলার স্বর বসে যাওয়া অথবা পরিবর্তন হওয়া ইত্যাদি উপসর্গ দেখা দিতে পারে।   

স্তন ক্যানসারঃ
স্তন ক্যানসার হলে একটি পিণ্ড বা চাকা দেখা দিতে পারে। স্তনের চামড়া কুঁচকে যেতে পারে এবং বোগলে চাকা চাকা হতে পারে।   
 
বৃহদান্ত্রের ক্যানসারঃ বৃহদান্ত্রের ক্যানসার হলে মল ত্যাগে অনিয়ম, মলের সঙ্গে রক্ত বের হওয়া অথবা তৈলাক্ত পদার্থ বের হওয়া ইত্যাদি হতে পারে। একপর্যায়ে পায়খানা বন্ধ হয়ে গিয়ে পেট ফুলে যাওয়ার মতো সমস্যাও দেখা দিতে পারে। 

মলদ্বারের ক্যানসারঃ  মলদ্বারের ক্যানসারে মলত্যাগে অসুবিধা, ব্যথা, রক্ত বের হতে পারে। এই রোগের প্রকোপ বেড়ে গেলে পায়খানা সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যাওয়ার মত সমস্যা হতে পারে।  
 
নারীদের জরায়ুমুখের ক্যানসারঃ নারীদের জরায়ুমুখের ক্যানসারের জন্য দায়ী হিউম্যান পেপিলোমা নামক ভাইরাস। এ ছাড়া পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার অভাব, খুব কম বয়সে বিয়ে, সন্তান হওয়া এবং অধিক সন্তান প্রসাবের কারণেও এই ক্যানসার হতে পারে। অতিরিক্ত সাদাস্রাব বের হওয়া , সহবাসের সময় রক্তক্ষরণ হওয়া,অনেক ব্যথা অনুভব করা ইত্যাদি এ ক্যানসারের উপসর্গ।
   
মস্তিষ্কের ক্যানসারঃ মস্তিষ্কের ক্যানসার বা টিউমার হলে মাথাব্যথা করা, শরীরের নির্দিষ্ট কোনো অঙ্গ দুর্বল বা অবশ হয়ে যাওয়া, হঠাৎ চোখে দেখতে অসুবিধা হওয়া, হঠাৎ খিঁচুনি বা অজ্ঞান হয়ে যাওয়া ইত্যাদি এসব উপসর্গ দেখা দিলে অবশ্যই দ্রুত ডাক্তারের কাছে যেতে হবে। 
  
ব্লাড ক্যানসারঃ
  ব্লাড ক্যানসার বা রক্তের ক্যানসার একটি অন্যতম মারাত্মক ব্যাধি। এটি হলে দুর্বলতা, রক্তশূন্যতা, দাঁতের মাড়ি বা অন্য স্থান থেকে রক্তক্ষরণ হওয়া, ঘন ঘন জ্বর হওয়া, অত্যধিক ক্ষুধামন্দা, বমি বমি ভাব, চেহারা ফ্যাকাসে হয়ে যাওয়া, ঘন ঘন কাশি হওয়া, কণ্ঠস্বর ভেঙে যাওয়া ইত্যাদি সমস্যা হতে পারে।  

যকৃৎ ও অগ্ন্যাশয় ক্যানসারঃ
যকৃৎ ও অগ্ন্যাশয় এগুলোর ক্যানসার হলে খাবারে অরুচি, বমি বমি ভাব, বদহজম, পেট ফাঁপা, পায়খানা পরিষ্কার না হওয়া, পেটে ব্যথা হতে ইত্যাদি হতে পারে।  
 
এছাড়াও মানুষের শরীরে নানা ধরনের ক্যানসার বাসা বাঁধতে পারে।  এবং এই ক্যানসার শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে হতে পারে। এবং এদের উপসর্গগুলোও আলাদা আলাদা রকম হতে পারে। তবে মনে রাখবেন ক্যানসার বলতেই কমবেশি রক্তশূন্যতা হবেই। খাবারে অরুচি, বমি ভাব, ক্লান্তি এবং অবসাদ, শরীরের ওজন কমে যাওয়া এইসব উপসর্গ থাকবেই।   

শেয়ার করুন

Author:

আমি একজন অতি সামান্য মানুষ। পেশায় একজন লেখক,ব্লগার এবং ইউটিউবার। লেখালেখি করতে খুব ভালো লাগে। আমার এই সামান্য প্রয়াসের মাধ্যমে মানুষের কিছু শেখাতে পারা ও বিনোদন দেওয়ার মাধ্যমে আনন্দ খুঁজে পায়।

0 coment rios: